
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ানকে এগিয়ে আসার আহ্বান
- আপলোড সময় : ০৫-০৯-২০২৫ ১২:০২:২৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-০৯-২০২৫ ১২:০২:২৭ পূর্বাহ্ন


রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সংকট দূরীকরণে আসিয়ান জোটকে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর)। সংস্থাটি বলছে, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশ ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সংকট মোকাবিলায় আঞ্চলিক জোট নিষ্ক্রিয় থাকলে মানবপাচার, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান এবং শরণার্থীর অনুপ্রবেশের মতো ঝুঁকি বেড়ে পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ সংকটের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সংস্থাটি জানায়, দ্রুতই রোহিঙ্গা সংকট উত্তরণ না হলে মানবপাচার, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান এবং শরণার্থীদের অব্যাহত আগমনের কারণে আসিয়ান অঞ্চলের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এ সময় বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থসহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় আসন্ন খাদ্যসংকট সমাধানে দ্রুত আসিয়ানকে একটি মানবিক তহবিল গঠনের অনুরোধ জানায় এপিএইচআর। সংস্থাটি বলছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এপিএইচআরের প্রথম বাস্তবতা যাচাই সফরের ভিত্তিতে গৃহীত এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল আসিয়ান ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে রোহিঙ্গা শিবিরে জীবনযাপনের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ, বিশেষত আসন্ন খাদ্য সংকট সম্পর্কে অবহিত করা। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে যে, ২০২৫ সালের নভেম্বরের পর খাদ্য বিতরণ বন্ধ হয়ে যাবে যদি প্রতি মাসে ১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার তহবিল জোগাড় না হয়। সংস্থাটি আরও বলেছে, শিক্ষায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য অপরিহার্য। এজন্য আসিয়ানকে আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে রোহিঙ্গা শিশু ও যুবকদের জন্য স্বীকৃত স্কুল শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ নিশ্চিত করতে। ফিলিপাইন সরকারের উদ্যোগে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রশংসা করে এপিএইচআর বলেছে, অন্যান্য আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোরও এই পথে এগিয়ে আসা উচিত। তারা জানান, সফরকালে তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠক করে সংকটের টেকসই সমাধান এবং অনুসন্ধানের ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেছে। এপিএইচআর জানায়, এই সংলাপ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর এবং স্বাগতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। সংস্থার সহ-সভাপতি ও মালয়েশিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার আট বছর পেরিয়ে গেলেও আসিয়ান এখনও এই সমস্যাকে নিজেদের সমস্যা হিসেবে দেখছে না। আমরা প্রথম ২০১৮ সালে আসিয়ান মানবিক তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলাম, - ও সেই আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি। যদি আসিয়ান এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে, মানবপাচার, অবৈধ বাণিজ্য ও ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার খেসারত গোটা অঞ্চলকেই দিতে হবে। মালয়েশিয়ার সংসদ সদস্য ও এপিএইচআরের বোর্ড সদস্য ওং চে বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং মিয়ানমার যেহেতু আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্র, আসিয়ান দেশগুলোর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। ডব্লিউএফপির হিসাবে, ২০২৫ সালের নভেম্বর শেষে খাদ্য বিতরণের বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে। কক্সবাজারের ১৩ লাখ শরণার্থীর জন্য খাদ্য সহায়তা চালিয়ে যেতে প্রতি মাসে ১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার প্রয়োজন। ফিলিপাইনের সাবেক সংসদ সদস্য ও এপিএইচআরের সদস্য রাউল ম্যানুয়েল বলেন, রোহিঙ্গা যুবকদের স্বীকৃত শিক্ষা ও প্রাসঙ্গিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ ছাড়া বন্দি অবস্থায় রাখা যাবে না। তাদের ভবিষ্যৎ এবং টেকসই সমাধানের যেকোনোও আশা নির্ভর করছে তাদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের ও গণতান্ত্রিক মিয়ানমার গঠনে অবদান রাখার সক্ষমতার ওপর। আমরা আসিয়ানকে আহ্বান জানাচ্ছি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে এই সুযোগ নিশ্চিত করতে।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ